সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তিয়াপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে লুকোচুরির দায়ে উচ্চ আদালত থেকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের লিগ্যাল নোটিশ হতে জানা যায়, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তিয়াপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে মর্মে প্রার্থী লিপি রানী দাস, বাদল মনি দত্ত, মোঃ আব্দুল্লাহ গং পৃথক পৃথকভাবে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ইং এবং ০৩ মে ২০২৩ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
আরও জানা যায়, বিষয়টি প্রকাশের পর গত ০১ জুন ২০২৩ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বিষয়টি ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ ও সহযোগী অধ্যাপক (ইংরেজি) ফারহানা জামানকে কমিটি করে প্রেরণ করেন৷ সময় ক্ষেপন করে তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করেন এবং অজানা এক রহস্যে বিবাদীগণ তদন্ত প্রতিবেদন জানলেও ভুক্তভোগীদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি গোপনীয়ভাবে লুকোচুরি করা হয়। তার আগে বিষয়টি প্রকাশ পেলে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বিষয়টি তদন্তের জন্য সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কবির খানকে প্রেরণ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ কবির খান সময় ক্ষেপণ করে ১৭ মে ২০২৩ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ১৮ মে ২০২৩ ইং তারিখে তদন্ত করেন। সময় ক্ষেপন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করেন এবং অজানা এক রহস্যে বিবাদীগণ তদন্ত প্রতিবেদন জানলেও ভুক্তভোগীদের কাছে এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টিও গোপনীয়ভাবে লুকোচুরি করা হয়।
কিছুদিন যাবত গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) স্বাক্ষরিত একটি পত্রে অভিযুক্ত স্কুল কমিটির সভাপতি একটি তদন্ত রিপোর্ট সবাইকে দেখিয়ে দাবি করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতির অভিযোগের সত্যতা পায়নি মর্মে উল্লেখ করেন। বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীগণ মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও তদন্তকারী কর্মকর্তাগণের সাথে বারবার যোগাযোগ করলে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি মর্মে উল্লেখ করেন। তাই প্রতিবেদনটি সঠিক কিনা এবং সঠিক হলে কেন এতোদিন থেকে ভুক্তভোগীদের কাছে গোপনীয় রাখা হয়েছে এবং কেন আপিলের সুযোগ ও ঊর্ধ্বতন তদন্তের জন্য সুযোগের সময় দেওয়া হলো না সেই বিষয়ে ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোঃ আতিকুর রহমান খান স্বাক্ষরিত একটি লিগ্যাল নোটিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষ ০৬ (ছয়) জন বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে জৈন্তিয়াপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ হায়দার আলী বলেন, আমি সৎ মানুষ। এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই। নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতি হয়নি। লিগ্যাল নোটিশ হাতে পেলে আইনগতভাবে জবাব দিবো।
এবিষয়ে জানতে এমসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (ইংরেজি) ফারহানা জামান বলেন, ভুক্তভোগীরা যখন যোগাযোগ করে তখন প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি। সময় ক্ষেপণ হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীরা পর্যাপ্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি। পরে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ঢাকায় যোগাযোগ করতে পারেন। লিগ্যাল নোটিশ হাতে পেলে আইনগতভাবে জবাব দিবো।
এবিষয়ে জানতে সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীরা আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। লিগ্যাল নোটিশ হাতে পেলে বিষয়টি আইনগতভাবে জবাব দিবো। প্রায় একমাসের উপরে হয়ে গেছে প্রতিবেদনটি ভুক্তভোগীদের দেওয়া হয়নি তবে এখন ভুক্তভোগীদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিবো।
এবিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দূর্গা রানী সিকদার বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। লিগ্যাল নোটিশ হাতে পেলে বিষয়টি আইনগতভাবে জবাব দিবো।
Leave a Reply