সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্স দিয়ে সন্তান প্রসব করার সময় একই দিনে চারজন নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের দাবি, নার্স দিয়ে সন্তান প্রসব করানো ও ভুল চিকিৎসার কারণেই চারজন নবজাতক মারা গেছে। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর উপজেলার ফতেপুর বাজারে ‘ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে কথা হয় গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের হাতির কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আরিফ উদ্দিন ও সেলিনা বেগম দম্পতির সাথে, আরিফ বলেন, ১৫ই সেপ্টেম্বর রাতে তার স্ত্রী সেলিনা বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তাৎক্ষণিক পার্শ্ববর্তী ফতেপুর বাজারে অবস্থিত ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্ত্রী’কে নিয়ে যান। যাওয়ার পর নয় হাজার টাকা চুক্তিতে নরমাল ডেলিভারির জন্য আশ্বস্ত করেন সেখানে কর্মরত নার্স সানজিদা আক্তার। তার কথামত রাজি হোন আরিফ সেলিনা দম্পতি। সেখানে রাত্রি যাপনের পর ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরে সেলিনার কোলে জন্ম নেয় একটি মৃত ছেলে সন্তান। তার পর নয় হাজার টাকা পরিশোধ করে মেডিকেল ত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু টাকা পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করলে নানা কথা শুনতে হয় আরিফকে। অবশেষে বাধ্য হয়ে টাকা পরিশোধ করেই স্ত্রী ও মৃত সন্তানকে নিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ত্যাগ করেন আরিফ।
উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের দারিখাই গ্রামের বাসিন্দা নুর আহমদ এর স্ত্রী নুর জাহান বেগমকে নিয়ে তার বাবা হাতির কান্দি গ্রামের মানিক মিয়া ১৫ ই সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে গেলে কর্তব্যরত নার্স সানজিদা আক্তার তাদেরকে ভর্তি হতে বলেন। এবং ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে নরমাল ডেলিভারিতে আশ্বস্ত করেন। সানজিদার কথামত ডেলিভারি করাতে রাজি হলে নুর জাহান বেগমও ওই রাতে একটি মৃত নবজাতক প্রসব করেন। পরে নুর জাহান এর পিতা মানিক মিয়াকেও টাকার জন্য চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা হয়।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগাছ গ্রামের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন-সেফালী দম্পতি। ১৫ই সেপ্টেম্বর সেফালীর প্রসব বেদনা উঠলে তাৎক্ষণিক নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ফতেপুরে। সেখানে নিয়ে গেলে নার্স সানজিদা তাকেও ভর্তি করার কথা বলেন। এবং তাদেরকে ৭ হাজার টাকার চুক্তিতে নরমাল ডেলিভারিতে আশ্বস্ত করেন। সানজিদার কথায় আশ্বস্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে রাজি হলে রাত ১০ টায় সেফালীর কোলে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের ঠিক দুই ঘন্টা পর সেই নবজাতকেরও মৃত্যু হয়। পরে চুক্তিকৃত ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ত্যাগ করেন কুতুব।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বড়গুল গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর-রাজিয়া দম্পতি। গত ১৫ ই সেপ্টেম্বর রাজিয়ার প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান স্বামী আলমগীর হোসেন। সেখানে যাওয়ার পর নার্স সানজিদা আক্তার তাদেরকেও ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে নরমাল ডেলিভারিতে আশ্বস্ত করেন। সানজিদার কথামত ডেলিভারি করাতে রাজি হলে রাজিয়া প্রসব করেন একটি মৃত মেয়ে সন্তান। পরে তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে ছাড় দেয় ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
হাতির কান্দি গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম ও সুহাদা বেগম দম্পতি। ফখরুল জানান, গত ১২ ই আগষ্ট তার স্ত্রী সুহাদা বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তাকেও নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে সানজিদার তত্বাবধানে সুহাদা বেগম একটি মৃত মেয়ে নবজাতক প্রসব করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
একই দিনে পর পর ৪ জন ও এর আগে আরো এক নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে নার্স সানজিদা আক্তার-কে পাওয়া যায়নি। ইউনাইটেড মেটারনিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ইসলাম আলী বিষয়টি অস্বীকার করেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসক ডাক্তার কিশলয় সাহা বলেন, একই সাথে এতো নবজাতকের মৃত্যু রহস্যজনক, বিষয়টি সরেজমিন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লাইসেন্স ও কাগজপত্র না থাকায় আগেও একবার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।
Leave a Reply