সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের হাদারপার গরুর হাটের মালিকানা নিয়ে সরকার ও ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। দীর্ঘ আড়াই যুগের বেশী সময় ধরে ওয়াকফ এস্টেটের নামে সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রভাব বিস্তার করে হাদারপার গরুর হাট থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওয়াকফ এস্টেটের আয়ের টাকা হাদারপার – উপরঘাম জামেমসজিদ, হাদারপার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও কুনকিরি জামে মসজিদের উন্নয়নে খরচের কথা থাকলেও কোটি কোটি টাকা গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা। হাদারপার – উপরঘাম জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ডাক্তার আখলাকুল আম্বিয়া, ছিফত উল্লাহ, সিকন্দর আলী, জালাল আহমদ, মন্তাজ আলী, মানিক মিয়া, হাদারপার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাবেক সেক্রেটারী শেরগুল আহমদ, শাহাদত হোসেন, কুনকিরি জামে মসজিদের মুসল্লী ইউনুস আলীসহ ওই ৩ মসজিদের অর্ধশতাধিক মুসল্লী জানান, আমরা শুনেছি আমাদের এই ৩টি মসজিদের উন্নয়নের জন্য হাদারপার বাজারে একটি ওয়াকফ এস্টেট আছে। কিন্তু হাদারপার ওয়াকফ এস্টেট থেকে উক্ত মসজিদ গুলোর উন্নয়নে কোন টাকা দোওয়া হয়নি। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান হাদারপার গরুর হাটে ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী লিয়াকত আজাদের একটি সংবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী এই গ্রুপটি হাদারপার বাজারে সরকারি ফেরীফেরীর অন্তর্ভুক্ত গরুর হাটে জোরপূর্বক ওয়াকফ এস্টেটের নামে চাঁদা আদায় করে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। সরকারি বাজারে এসব তান্ডবলীলায় সাধারণ মানুষ হতবাক!। তোয়াকুল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন স্বপন জানান, হাদারপার বাজারটি রুস্তুমপুর ইউনিয়নের উপরঘাম মৌজায় অবস্থিত। বাজারটির জেএলনং- ২৫ এবং এসএ খতিয়ান – ২ও ১৪। এসএ খতিয়ানের ৭৭,৭৮,৭৯,৯৮ ও ৯৯ নং দাগে রয়েছে মোট ৫,২৩ একর জমি রয়েছে।হাদার পার বাজারে নয়টি দাগ রয়েছে। দাঁগগুলো যথাক্রমে, ৭৬,৭৭,৭৮,৭৯,৯৩,৯৫,৯৭,৯৮,ও ৯৯। উল্লেখিত ৫ দশমিক ২৩ একর জমির মধ্যে ২ দশমিক ৯৬ একর জমির মালিক ওয়াকফ এস্টেট ও ১ দশমিক ৩৮৫০ একর জমি হাদারপার বাজারের। তিনি বলেন ২০০১ সালে হাদারপার বাজারটি ফেরি ফেরি করণের সময় ২ দশমিক ৩৪ একর জমি খাস খতিয়ান ভুক্ত হয়। ১৯৮৮ সালে জনৈক ফরজান আলী বাদী হয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বিবাদী করে গোয়ানঘাট সহকারী জজ আদালতে ৯/৮৮ একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। ১৯৮৯ সালের ৩১ জানুয়ারি উক্ত মামলাটি খারিজ হয়। এই মামলাটি খারিজ হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে ওই ফারজান আলী সহকারী জজ আদালত গোয়াইনঘাটে ৮৮/ ৮৯ নং স্বত্ব আপিল মামলা দায়ের করেন। ফরজান আলী তার দায়ের করা স্বত্ব আপীল মামলায় হেরে যাওয়ার ভয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে মামলাটি প্রত্যাহার করেন। বিরোধপু জমির ভূয়া কাগজাদি প্রস্তুুত করে এই জমিকে ওয়াকফ এস্টেট দাবী করে জনৈক নূরউদ্দিনকে মুতাওয়াল্লী নিয়োগ করেন ফরজান আলী। স্ব-ঘোষিত বিরোধপূর্ণ জমিকে ওয়াকফ এস্টেটের জমি দাবি করে নুর উদ্দিন ১৯৯৬ সালে গোয়াইনঘাট সহকারী জজ আদালতে ১৭/৯৬ স্বত্ব মামলা দায়ের করেন এবং ৯৮ সালে মামলাটি পুনোরায় চালু করেন। ২০০০ সালের ১৯ মে ওয়াকফ এস্টেটের পক্ষে মুতাওয়াল্লী নুর উদ্দিন মামলাটির একতরফা রায় পান। মামলাটির একতরফা রায় পাওয়ার পর মুতাওয়াল্লী নুরুদ্দিন কিছুদিন রায়ের বিষয়টি গোপন রাখেন। ২০০৩ সালে মামলার রায় সম্পর্কে সরকার অবহিত হলে ১৬/২০০৩ নং মিস কেইস করা হয় । ৮৩ /২০০৩ ইংরেজি মিস কেস আপীল মামলাটি বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা জজ ও অস্ত্র বিস্ফোরক বিশেষ আদালতে সরকার পক্ষে রায় দেন বিজ্ঞ আদালত। অপর দিকে বিজ্ঞ আদালত ওয়াকস এস্টেটের পক্ষে আসা রায়টি বাতিল করে। সরকারের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে কথিত ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী নূরউদ্দিন হাইকোর্ট সিভিল পিটিশন মামলা দায়ের করে। যাহার নং ৩৫৪ /২০০৬ এদিকে হাদারপার বাজারের ইজারাদার উসমান আলী টোল আদায়ে বাধা দেওয়ায় ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী নুরউদ্দিন গং দের উপর হাইকোর্টে রিট করেন। রিট নং ২১৫০ /১৯৯৩। ২০২৩ সালে উপজেলা হাটবাজার পরিচালনা কমিটির কমিটির সভায় হাদারপার বাজারকে ইজারাভূক্ত করে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী লিয়াকত আলী আজাদ বাংলাদেশ সরকারকে বাদী করে ইজারার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১৬৫১/২০২৩ নং রিট করে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নেন। এছাড়া ২০২৩ সালের ৭ আগষ্ট ওই স্থগিতাদেশ পুনরায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। জানা এত প্রতিকুল অবস্থায়ও সরকার হাদারপার বাজার থেকে নিয়মিত খাস আদায় করে যাচ্ছেন। চলতি বছরে সরকারের রাজস্ব আদায়-বন্দে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী লিয়াকত আলি আজাদ। জেলা প্রশাসকের নিকট দেয়া আবেদন বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ৩৩৪০ /২০২৪ রিট আবেদন করে। এবং ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে কেন খাস আদায় অবৈধ হবে না অবৈধ হবে না হাইকোট জানতে চায়। ২৭ মে ২০২৪ ইং তারিখে লিয়াকত আলী আজাদ খাস আদায় বন্ধে হাইকোটে রিট ৬২৪৫ /২০২৪ নল রিট আবেদন করে এটার বিরুদ্ধে সরকার রুল জারি করে। এ বিষয়ে লিয়াকত আজাদ বলেন, আমি হাদারপার ওয়াকফ এস্টেটের অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী। তিনি জানান হাদারপার ওয়াকফ এস্টেটের আয়ের টাকা হাদারপার – উপরঘাম জামে মসজিদ, হাদারপার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও কুনকিরি জামে মসজিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। এছাড়াও এ এস্টেট নিয়ে সরকারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলমান থাকায় সিংহভাগ টাকা মামলায় খরচ হয়।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হাদারপার বাজারের গরুর হাট সরকারের ফেরিফেরি ভূক্ত। এটি সরকারের শতভাগ মালিকানা। তবে ওয়াকফ এস্টেট কতৃপক্ষ হাদারপার গরুর হাটের কিছু জমির মালিকানা দাবি করেন। এ বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। সাধারণ ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মসজিদের ওয়াকফ আলাদা ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পরকালে এর জবাবদিহিতা অন্যগুলোর চেয়ে অধিক ও কঠিন। পরিচালনায় থাকার জন্য অন্যান্য ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এখানে থাকতে হয় স্বতন্ত্র গুণাবলি। ঈমানের পরিপক্বতা, পরকালের বিশ্বাস, নামাজ আদায়ে গুরুত্ব ও যত্নশীলতা, দান-সদকায় অগ্রসরতা এখানে বিশেষভাবে বিবেচ্য। হাদারপার ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী এসব তোয়াক্কা করছেন না। আয়-ব্যয়সহ মসজিদের পবিত্রতা ও ওয়াকফের বিধিবিধান রক্ষায় তার অনিয়ম ও অবহেলা অযাচিত ও গর্হিত। ইমাম ও খতিবদের কাছ থেকে শরিয়া আইন ও ওয়াকফ এস্টেটে অডিটবিষয়ক সেবা নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের মতো করে চলছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত লিয়াকত আলীকে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
Leave a Reply