শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস। তিনি ছিলেন বাঙালির গৌরব। কায়েদে আযম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ আলী বগুড়া পর্যন্ত তাকে গাদ্দার, দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু বাঙালি একথা বিশ্বাস করেনি। তাদের শেরে বাংলার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এক বিন্দু কমেনি। যার প্রমাণ ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পাওয়া যায়।
তিনি ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবেন। তিনি কোনোদিন কারো কাছে মাথা নত করেননি। এই মহান নেতা আইয়ুব খানের শাসনামলে পাকিস্তানের নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল ইহকাল ত্যাগ করেন।
তিনি তার জীবনে অনেক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, অনেক ভোট সংগ্রহ করেছেন। অথচ আইয়ুব খানের নির্বাচনে তার নিজের ভোট নাই শুনে শেরে বাংলা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। এ দুঃখ তাকে মৃত্যুপথ যাত্রী অবস্থায় ব্যাথায় কাতর করে তুলেছিল। শেরে বাংলার এ মনোবেদনা সর্ম্পকে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান তার “স্বৈরাচারের ১০ বছর” নামক গ্রন্থের ২০৬ পৃষ্ঠায় বলেন, “বল কী? আমার (শেরে বাংলা) ভোটও নাই। এটাও কেড়ে নিয়েছে! আল্লাহ যে দেশে আমার ভোট নাই সে দেশে বাঁচার ইচ্ছেও নেই। আমাকে তুমি তুলে নাও।”
আল্লাহ শেরে বাংলার দোয়া কবুল করেছিলেন। ঠিক নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ২৭শে এপ্রিল, ১৯৬২ সালে ৮৮ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে পরপারে তুলে নিলেন। শেরে বাংলার মরদেহ ঢাকার টিকাটুলি এলাকার তার ২৭ কে এম দাস লেনের বাসায় রাখা হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জনসমুদ্রে শেরে বাংলার লাশ এগিয়ে চলছে রাজপথে। রাজপথের এ মিছিলে যোগদান করলেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল আযম খাঁ। পল্টন ময়দানে জানাযা শেষে শেরে বাংলাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দাফন করা হল। একই স্হানে পরবর্তীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমউদ্দীনকেও দাফন করা হয়। তাদের তিনজনের সমাধিস্থল ঐতিহাসিক জাতীয় “তিন নেতার মাজার” নামে পরিচিত।
বাঙালির কাছে বাঙালির মর্যাদা লাভ করার গৌরব শেরে বাংলা একাই লাভ করেছিলেন। শেরে বাংলা আমাদের মাঝে বেঁচে নেই, কিন্তু বাঙালি যতদিন বেঁচে থাকবে, শেরে বাংলা ততদিন তাদের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শেরে বাংলা সর্ম্পকে মন্তব্য করতে গিয়ে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেছিলেন, “আমি রাজনীতি বুঝিনে।ওসব দিয়ে আমি ফজলুল হকের বিচার করিনে। আমি তাকে বিচার করি গোঁটা দেশ ও জাতির স্বার্থ দিয়ে। একমাত্র ফজলুল হকই বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে বাঁচাতে পারে। সে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সাচ্চা মুসলমান। খাঁটি বাঙালি ও সাচ্চা মুসলমানিত্বের এমন সমন্বয় আমি আর দেখিনি।”
লেখকঃ
প্রভাষক ফয়েজ আহমদ
মওলানা ভাসানী গবেষক
সিনিয়র প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ)
উইমেন্স মডেল কলেজ, সিলেট।
Leave a Reply