তীব্র গরমে শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। শরীরের তাপমাত্রা যায় বেড়ে। এই তাপমাত্রাই একটি মাত্রা অতিক্রম করলে তা শরীরের জন্য অসহ একটা পর্যায়ে চলে যায়। একপর্যায়ে এমনকি চেতনা হারানোর মতো দশা তৈরি হতে পারে। এই পরিস্থিতিই হিট স্ট্রোক নামে পরিচিত।
শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে হিট স্ট্রোক হয়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. অত্যধিক ক্লান্ত দুর্বল লাগা
২. মাথা ব্যথা
৩. অসুস্থবোধ করা
৪. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
৫. বমি বমি ভাব
৬. শরীরের ত্বকের রং বদলে যাওয়া। অবশ্য যাদের ত্বক কালো বা বাদামি, তাদের ক্ষেত্রে চামড়ার রং বদল সাধারণত আলদাভাবে ধরা পড়ে না।
৭. ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
৮. শ্বাস–প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া
৯. অতিরিক্ত তৃষ্ণাবোধ
১০. হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া
১১. অচেতন হয়ে যাওয়া
প্রতিকারের উপায়
এ তো গেল লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিচের চারটি কাজ দ্রুত করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন। পরামর্শগুলো হলো—
১. দ্রুত নিকটস্থ ঠান্ডা কোনো স্থানে যেতে হবে। নিজে বা অন্যের সহায়তা নিয়ে স্যালাইন, স্পোর্টস ড্রিঙ্ক বা ইলেকট্রোলাইট ড্রিঙ্ক পান করতে হবে। নিদেনপক্ষে ঠান্ডা পানি পান করতে হবে।
২. মোজাসহ শরীরে থাকা অদরকারী পোশাক খুলে ফেলতে হবে।
৩. শরীরের ত্বককে ঠান্ডা করতে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ভেজানো। ঘাড় ও মাথা ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা এবং ঢেকে রাখা।
৪. পানিতে গা ডুবিয়ে দেওয়া। গ্রামে হলে পুকুরে নেমে শরীর ঠান্ডা করা। শহরে শাওয়ারের নিচে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করা।
এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার সাথে সাথে পরিচিত কাউকে কাছে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যাতে পরিস্থিতি আরও বাজে হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, হিটস্ট্রোকের প্রথম ধকল কেটে গেলেও এর ফলে শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
প্রতিরোধের উপায়
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে রাখা ভালো। কারণ, তাহলে এই অত্যধিক তাপমাত্রায় তুলনামূলক সুস্থ থাকা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এবং ইউনিসেফ এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু উপায় অনুসরণের পরামর্শ দেয়। উপায়গুলো হলো—
১. দিনে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি পান করা
২. ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরিধান করা
৩. দুপুরের সময়টাতে যখন সূর্যের তাপ বেশি, সে সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকা
৪. দিনের বেশির ভাগ সময় ছায়ায় বা সম্ভব হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করা
৫. তাপ থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা দরজার পর্দা নামিয়ে রাখা
৬. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা
৭. শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে এ সময় হালকা ব্যায়াম করা
৮. ঘরে থাকার সময় সম্ভব হলে তাপ উৎপন্ন হয়—এমন ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখা
সঙ্গে সব সময় স্যালাইন রাখা
৯. অতিরিক্ত ঘেমে গেলে স্যালাইন পানি পান করা
১০. ইলেকট্রোলাই ড্রিঙ্ক এ সময় ভালো কাজে দেয়