ডেস্ক নিউজ : দক্ষিণ সুরমার বহুরূপী প্রতারক জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার উকিল নোটিশ পাঠালেন ভুক্তভোগী সিহাব উদ্দিন। পাওনা টাকার বিপরীতে শিহাবকে দেওয়া চেক ব্যাংকে ডিজওনার হলে তিনি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই উকিল নোটিশ পাঠান। তিনি জানিয়েছেন উকিল নোটিশের সাথে সাথে বিষয়টির সমাধা্ন না হলে যথারীতি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান।
শিহাব উদ্দিন জানান, দক্ষিণসুরমা উপজেলার তুরুকখলা গ্রামের মৃত শাইস্তা মিয়ার ছেলে এই জাহিদ হাসান। তিনি নিজেকে কখনো বিধান গ্রুপ, কখনো সারওয়ার গ্রুপ, কখনো জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন গ্রুপ, আবার কখনো মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় প্রদান করেন। তার প্রতারণার এক একটি গল্পও ভিন্নরকম। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে চলে তাঁর এই প্রতারণা কার্যক্রম। প্রতারণা করে ইতোমধ্যে জাহিদ হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। জাহিদের উপরে মামলা রয়েছে একাধিক। নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার রয়েছে অন্তত ৭ থেকে ৮ টি। চেক জালিয়াতির একাধিক অভিযোগও রয়েছে জাহিদের উপর। এর আগে নারী কেলেংকারীতেও নাম উঠে প্রতারক জাহিদের।
সরকারি চাকুরীজীবীদের বদলী, বিদেশ পাঠানো, জমি বিক্রয়, অন্যের বাড়ির কাগজ ভুয়া নিজের নামে দেখিয়ে বিক্রয়, ভুয়া ভিসা তৈরি, সরকারি কোনো কিছুর অনুমোদন পাইয়ে দেওয়া, বিদেশী পাত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত, সরকারি পদোন্নতি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে ঢুকানোসহ সবকিছুই করে দিচ্ছেন তিনি। এইসব কিছুর জন্য বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জাহিদ হাসান হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।
প্রতারক জাহিদ হাসান প্রথম পরিচয়ে নিজের মোবাইল থেকে উল্লেখিত নেতাদের সাথে নিজের ছবি প্রদর্শন করেন। এভাবেই শুরু হয় প্রতারণার কৌশল। ফলে অনেকেই প্রতারক জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। এর আগে তুরুকখলা হাড়িয়ার চর গ্রাম থেকে অন্ত্রসহ আটক হন এই জাহিদ হাসান। বর্তমানে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে অন্তত ৬ টি। প্রতারক এই জাহিদ হাসানের অভিযোগের ফিরিস্থ ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।
জাহিদ হাসানের প্রতারণার শিকার শিহাব উদ্দিন নগরীর মাছুদীঘির পাড়স্থ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। শিহাব উদ্দিন জানান, জাহিদ হাসানের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে। এ সময় জাহিদ নিজেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বলে আমাকে জানায়।
পরবর্তীতে আমার পরিচিত একজন স্কুল শিক্ষিকার বদলীর জন্য জাহিদ হাসানের সাথে কথাবার্তা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪ লাখ টাকা জাহিদের হাতে তোলে দেওয়া হয়। কিন্তু টাকা প্রদানের বছর অতিবাহিত হলেও প্রতারক জাহিদ হাসান বদলী আদেশ করাতে বিফল হন। এরপর টাকা ফেরত চাইতে গেলেও একের পর এক তারিখ দিয়েও কথা রাখেনি জাহিদ হাসান। বিষয়টি সমাধানের জন্য জাহিদের সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠক থেকে টাকা প্রদানের একাধিক তারিখ দিয়েও কথা রাখে নি জাহিদ। সর্বশেষ সিলেটের একজন নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে শিহাবকে আংশিক পরিশোধ হিসেবে ৯০ হাজার টাকার একটি চেক দিলেও ব্যাংকে টাকা না থাকায় টাকা ক্যাশ করা সম্ভব হয় নি। এর পর থেকে প্রতারক জাহিদ হাসান উল্টো শিহাবকে ভয়-ভীতি ও হুমকী দিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন।
এদিকে জাহিদের প্রতারণার শিকার সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদা নাজিম রুবি। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে জাহিদ হাসান সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাদের সাথে। মাহমুদা নাজিম রুবিও নিজ ভাইয়ের মতো আদর করেন প্রতারক জাহিদ হাসানকে। তারপর শুরু হয় প্রতারণার ফাঁদ। প্রথম টার্গেট পরের জমি দেখিয়ে টাকা আত্মসাত। হয়েছেও তাই। তবে এই প্রতারণার শিকার মাহমুদা নাজিম রুবি একা নন। বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা শাকেরা সুলতানা জান্নাত, হাসনা হেনা চৌধুরী, মিনারা বেগম, মাসুম আহমদ জমিলা আক্তার,আরিফ আহমদ, সোনাবান বিবিসহ অন্তত আরও ১৫ জন।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে এয়ারপোর্ট রোডের নয়াবাজার এলাকার একটি ভূমি বেছে নেয় জাহিদ হাসান। তারপর সেখানকার স্থানীয় দালালদের এজেন্ট নিয়োগ করে প্রত্যেতকেই জায়গা পরিদর্শণে নিয়ে যাওয়া হয়। আর জায়গার নামে পূর্ব থেকেই তৈরি করা ছিল জাল দলিল। পরবর্তীতে সেই স্থান পরিদর্শণ এবং জাহিদের কথা অনুযায়ী স্থানীয় এজেন্টদের আলাপচারিতার পর এক এক করে ক্রেতার তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। প্রথমেই ভুয়া সেই জাল কাগজ মাধ্যমে ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তোলে দেন মাহমুদা নাজিম রুবি। তারপর বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা শাকেরা সুলতানা জান্নাত, হাসনা হেনা চৌধুরী, মিনারা বেগম, মাসুম আহমদ জমিলা আক্তার,আরিফ আহমদ, সোনাবান বিবিসহ অন্তত ১৫ জনের কাছ থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা গ্রহণ করেন প্রতারক জাহিদ হাসান। পরবর্তীতে প্রতারণা বুঝতে পারার পর জাহিদ হাসানের মোবাইল নাম্বার ও ওয়াটসআপ নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও বিফল হন সকলেই। উপরন্তু হামলা ও হুমকীর শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে জাহিদ হাসান বলেন, সবাইকে টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছি। তারিখ অনুযায়ী সবাই টাকা পেয়ে যাবেন।